সিলেটের গোলাপগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, নবীগঞ্জ উপজেলার প্রায় তিন লক্ষ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাঁদদেশে বসবাস করছে।গত দুদিনের বৃষ্টিতে কয়েকটি পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটলেও কোন প্রানহানি হয়নি। গত পাচঁ বছরে শ্রীমঙ্গল গোলাপগঞ্জ ও নবীগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় মাটি চাপা পড়ে দুটি পরিবারের ১২জন সহ অন্তত ৭০ জনের মূত্যু হয়েছে। লাগাতার মুষলধারে বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধ্বসের ঘটনা শুরু হয়। সিলেটের এ তিনটি উপজেলার মাধ্যে হবিগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে পাহাড় ধ্বসে মৃত্যুর ঝুঁকি একটু বেশী। নবীগঞ্জের দিনারপুর এলাকার পানিউন্দাতে একই পরিবারের ৬ জন ও শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ে একই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু এখনো এলাকার মানুষের কাছে আতংকিত ঘটনা। এছাড়া বিচ্ছিন্ন ভাবে তিনটি উপজেলায় পাহাড় ধ্বসে প্রায় সত্তর জনের মৃত্যু হয়েছে। তবুও ছিন্নমুল ভুমিহীন মানুষেরা জীবন মৃর্ত্যুর ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছেন। এদের পূর্ণবাসনে সরকারী উদ্যোগ গ্রহন অতি প্রয়োজন বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল। দিনারপুর এলাকার দেবপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান এড.মাসুম আহমদ জাবেদ বলেন, নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারী আইনকে বৃদ্বাঙ্গুলী দেখিয়ে পাহাড় ও টিলা কেটে উজার করছে প্রভাবশালীরা। গত এক যুগে দুটি উপজেলার হাজারের বেশী সরকারী ও ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় টিলা সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কেটে সমান করা হয়েছে। ফলে এসব পাহাড় টিলা ধ্বসে মূত্যুর ঝুঁকি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
নবীগঞ্জ চেয়ারম্যান সমিতির সাবেক সভাপতি আ.ক.ম. ফখরুল ইসলাম বলেন, পাহাড় টিলা বেশীর ভাগই কাটা হয়েছে আবাসিক প্রকল্প, বানিজ্যিক মার্কেট কিংবা ব্যক্তিগত ঘরবাড়ি তৈরী-মাটি ভরাটের জন্য। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক নির্মান কাজ শুরু হলে নবীগঞ্জের দিনারপুর অঞ্চলের পাহাড় কেটে উজার করে মাটি নেয়া হয়। এসব পাহাড় টিলা কাটাঁর ফলে দ্রুত প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। বিলীন হচ্ছে জীব-বৈচিত্র ও পরিবর্তন হচ্ছে ভূমি মাপের। এছাড়া পাহাড় টিলা কেটে পাদঁদেশে নির্মান করা হচ্ছে ঝুকিপূর্ণ বাড়ি-ঘর। ফলে বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধ্বসে ঘটছে প্রাণ হানী। ২০১০ সালে নবীগঞ্জের দিনারপুর পাহাড়ি এলাকায় মাটি চাপা পড়ে মর্মান্তিকভাবে একই পরিবারের ৬জন এবং মহা সড়কে মাটি নেয়ার সময় পাহাড় ধসে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহায়তায় স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে এসব পাহাড় টিলা কেটেঁ মাটি বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। এমনকি সরকারী রাস্তা-ঘাট নির্মানে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড়ী টিলার মাটি ও বালু।
সূত্র জানায়,সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরবতার সুযোগে রাজনৈতিক দলের মদদপুষ্ট লোকজন নির্বিচারে পাহাড় টিলা কেটে সমতল ভূমিতে পরিনত করছে। অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা সরকারী বা শীর্ষ স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সাথে সরাসরি জড়িত থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরবতা পালন করে। আবার মাঝে মধ্যে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে টিলার মাটি কাটায় জড়িত ব্যক্তি ও পরিবহন আটক করলেও রাজনৈতিক চাপে অথবা উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। এদিকে জমির দামের উর্ধ্ব গতিতে অনেকেই প্রলুদ্ধ করছে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় টিলা কেটে সমান করে বিক্রি করতে। হাউজিং ব্যবসা ও বানিজ্যিক মার্কেট পাহাড় টিলার মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। পাহাড় টিলা নিধনের প্রতিবাদে এখন পর্যন্ত নবীগঞ্জে কিংবা গোলাপগঞ্জে বড় ধরনের কোন আন্দোলন হয়নি। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝে মধ্যে ট্রাক ও শ্রমিকদের আটক করলেও পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না। কিন্তু আসল অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। এর ফলে নবীগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার পরিবেশ পরিস্থিতি এখন হুমকির মূখে। পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে নবীগঞ্জের দিনারপুর এলাকার শত শত পাহাড় টিলা রক্ষায় প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। সরেজমিনে তিন উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা ঘুরে জানা যায়, উপজেলাগুলোর পাহাড়ী মাটি ট্রাক প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আর নবীগঞ্জের দিনারপুর এলাকার পাহাড়ি মাটি ট্রাক ৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। কান্দিগাঁও গ্রামের নুর উল্লাহ জানান বিশ্ব রোড নির্মানের সময় ৪০ হাজার টাকায় তার বাড়ির দুটি বিশাল পাহাড় বিক্রি করেন। ঐ পাহাড় দুটি ছিল ঐ এলাকা উচু টিলা। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ বলেন আমাদের এলাকার শতাধিক পাহাড় ও টিলা কেটে উজার করা হয়েছে। এসব টিলা ও পাহাড়ের মাটি পানির ধরে বিক্রি করা হয়েছে। সঠিক মূল্য পাননি মালিকগন। নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সরওয়ার বলেন, এব্যাপারে অভিযোগের বিত্তিতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জীতেন্দ্র কুমার নাথ বলেন আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবো।
বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
তিন উপজেলায় আড়াই লক্ষ মানুষের মৃর্ত্যু ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদঁদেশে বসবাস
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন