রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৭

শুভ বিদায় ২০১৬; স্বাগতম ২০১৭

হাফিজুল ইসলাম লস্কর :: আজ শুরু হলো খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জির নতুন বছর ২০১৭। বিদায় নিয়েছে ২০১৬- সালে। আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেল আরেকটি বছর। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে গণনা শুরু হয়েছে নতুন বছর ২০১৭-এর।

নতুন বছরের আগমনের আগমুহূর্তে বিশ্বের সব মানুষ শেষবারের মতো বিদায়ী বছরটি কেমন গেল তা স্মৃতির পাতায় ঘুরে দেখার চেষ্টা করবেন।

হারিয়ে যাওয়া বছরের সব জরা-ক্লান্তি আর গ্লানিকে মুছে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার উৎসবে মেতে উঠেছিল পুরো বিশ্ব। মধ্যরাতে জেগে উঠেছিল পুরো বিশ্ব বর্ষবরণের উৎসবে। সবাই প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে স্বাগত জানায় নতুন খ্রিস্টীয় বর্ষ ২০১৭-কে।

নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বছর। কিন্তু যে বছরটি হারিয়ে গেল জীবন থেকে, ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে, তার সবই কি হারিয়ে যাবে?
মুছে যাবে সব?

ঘটনাবহুল ২০১৬-এর অনেক ঘটনার রেশ টেনেই মানুষ এগিয়ে যাবে ২০১৭ সালের দিনরাত্রির পথে। জাতীয় জীবনে অধিকাংশ কাজই খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জি মনে করা হলেও খ্রিস্টীয় বর্ষ ঘটা করে পালন করা হয় না। তবে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে বছরটি কেমন গেল তার হিসাব-নিকাশ সবাই করে থাকেন। আমাদের জাতীয় জীবনে ২০১৬ একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। নানা ক্ষেত্রে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে পুরো জাতি। এসেছে নানা চ্যালেঞ্জও। অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সবার চেষ্টা ছিল এগিয়ে যাওয়ার।

গত বছরটি আমাদের জন্য অনেক কারণেই আলোচিত-সমালোচিত। রাজনৈতিক যোগ-বিয়োগ, ধর্মীয় সম্প্রীতি-সহিংসতা, আন্তর্জাতিক শুভ-মন্দ দৃষ্টি আমাদের বারবার হোচট খেতে বাধ্য করলেও আমরা উঠে দাঁড়িয়েছি।
বিপদসংকুল পথেই দীপ্ত পায়ে হেঁটেছি।

আমাদের সংস্কৃতির ওপর থাবা এসেছে- তবুও আমরা থমকে যাইনি। আমাদের বিনোদনের সফলতা-ব্যর্থতাও আমাদের নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। আমাদের সাহিত্যাঙ্গনে এসেছে নতুন বাঁক। আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি। আমরা হোঁচট খেয়ে খেয়ে পথে চলতে চলতে দুরন্ত পথিক হয়েছি।

২০১৬ সালে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য ছিল স্থানীয় সরকারের নানা পর্যায়ে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন। উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচন ছাড়াও হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। সব নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন বেশি। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুটি দলেরই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বছরের শেষ দিকে এসে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংলাপে বসেছে দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো। জাগাচ্ছে দেশে গণতন্ত্রের চর্চার পথে নতুন কিছুর আশা।

বছরজুড়ে আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল জঙ্গিবাদ। সারা বিশ্বে যখন জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সেখানে এর বিষবাষ্প থেকে মুক্ত ছিল না বাংলাদেশও। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি এবং শোলাকিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠীর বর্বরতা ও হত্যাকাণ্ড অবাক করেছে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বকে।

দুটি ঘটনার পর থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হয়ে ওঠে দেশের আইনশৃংখলা বাহিনী। নানা অপারেশনের মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদকে সমূলে উৎপাটনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বছরের শেষ দিকে এসে নারী জঙ্গিদের বিষয়টি আরও জোরদার হয়ে ওঠে।

এ বছর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে বিষয়টি সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম ছিল না। সেটি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। সারা বিশ্বের আলোচিত এই নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নানা কারণে বিতর্কিত এই প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে কী কী প্রভাব পড়বে তার হিসাব-নিকাশ চলছে এখনও।

জাতিকে কলংকমুক্ত করতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ফাঁসি কার্যকরের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল ২০১৬ সালেও। যুদ্ধাপরাধের দায়ে এ বছর ফাঁসি দেয়া হয় আলবদর নেতা ও জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামী এবং আলবদর কমান্ডার মীর কাসেম আলীকে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৭.১১ শতাংশ হওয়ার ঘোষণা আসে ২০১৬ সালে। তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে আলোচনায় ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টিও সরেনি আলোচনা থেকে।

কূটনৈতিক ও মানবিক দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জাতি-গোষ্ঠীর মানুষেরা সেখানকার সেনাবাহিনীর গণহত্যা এবং দমন-নিপীড়নের মুখে বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রেবেশ করার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারকে চিঠিও দেয়া হয়েছে।

২০১৬ সালে দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে ৫০০ স্কুল-কলেজকে বেসরকারি থেকে সরকারিকরণ। সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও রয়েছে একটি বিশাল অর্জন। বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে আমাদের পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ। এই উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। সেই মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভ করেছে। তথ্য-প্রযুক্তি খাতেও এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

বিগত বছরটা আমাদের ভালোই কেটেছে। হিসেবের খাতা খুলে দেখেছি- খুব বেশি ব্যর্থতার কিছু ছিলো না। কিছু ভুল-ত্রুটি তো থাকতেই পারে। যেহেতু আমরা মানুষ। আর মানুষ হিসেবে ভুল করার অধিকার কেবল আমাদেরই আছে। ব্যর্থতা এবং সফলতার মাপকাঠিতে খুব বেশি ব্যর্থ নই আমরা। বরং সফলতার ঝুলিটা বরাবরই সমৃদ্ধ হয়েছে।

২০১৬ সালে আমাদের ব্যক্তিজীবনে, সামাজিক প্রেক্ষাপটে, রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য থমকে যাওয়ার কারণ না খুঁজে অশুভকে বিতাড়িত করে শুভক্ষণকে বরণ করবো।

কবিগুরুর ভাষায় বলতে হয়, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা। অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’
সব আশা-স্নেহ-ভালোবাসা স্মৃতি হয়ে থাকুক। আগামী আসুক পুষ্পশোভিত হয়ে। প্রজ্জ্বলিত সূর্যের আলোকচ্ছটায় আলোকিত হোক বিশ্ব। বিশ্বের যাবতীয় মানুষের কল্যাণ হোক। বাংলাদেশ উত্তরোত্তর সফলতার দিকে এগিয়ে যাক। সবশেষে কবি মুহিব খানের ভাষায়" সম্ভবনার দেশ আমার বাংলাদেশ, জেগেছে বাংলাদেশ এখনি সময় তার। এই কবিতার ভাষাই আমি বলছি বাংলাদেশ জেগেছে, এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে এবং থাকবেই। কোন ষড়যন্ত্র আমার/আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে দাবাইয়া রাখতে পারবেনা, ইনশাল্লাহ।
(বিদায় ২০১৬; স্বাগতম ২০১৭)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন