কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লহ্ মানুষ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ফেরেরেস্তাদের ডেকে বলেছিলেন তিনি পৃথিবিতে তার খলিফা বা প্রতিনিধি প্রেরন করতে চান।সুতারাং মানুষের আসল পরিচয় হচ্ছে আল্লাহ্র খলিফা বা প্রতিনিধি।এখানে আলাদা ভাবে কোন বিষেশ মানুষকে আল্লহর প্রতিনিধি বলা হয়নি বরং প্রতিটি মানুষই সতন্ত্রভাবে আল্লাহর খালিফা।রাস্তার ধারে ময়লা কাপড় পরে শুয়ে থাকা দরিদ্রতম মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্ব পরাশক্তির প্রেসিডেন্ট বা বিশ্বের সবচাইতে সম্পদশালী বা সবচাইতে জ্ঞানী ব্যাক্তিটিও,মান
ুষ মাত্রই খলিফা।আর এই খেলাফতের কারনেই মানুষের অন্য নাম আশরাফুল মাখলকাত বা সৃষ্টির সেরা।কারন বিশ্বের সব সৃষ্টির মধ্যে একমাত্র মানুষকেই খেলাফতের মর্যাদা দেয়া হইছে।তা না হইলে শক্তি,সংখ্যা,আকার-আকৃতি যে কোন বিচারেও ফেরেশ্তারা মানুষের চেয়ে অগ্রগামী-কিন্তু তারাও মর্যাদা দিক দিয়ে এতটা পিছনে যে ফেরেস্তারা মানুষকে সেজদা পর্যন্ত করতে বাধ্য হয়েছে।অথচ মানুষের কাছে সেজদার দাবিদার একমাত্র আল্লাহ্।
তা হইলে খেলাফত বা প্রতিনিধিত্ব বলতে কি বোঝায় এটা জানা আমাদের জন্য খুব জরুরি।কারন মানুষকে তৈরি করা হইছে খলিফা হিসাবে।আর যাকে যে কাজের জন্য তৈরি করা হইছে সে কাজ ঠিকমত করাই হচ্ছে তার জন্য ইবাদত।সুতরাং কোরআনে যেখানে বলা হইছে মানুষ এবং জ্বিন কে সৃস্টি করা হইছে একমাত্র ইবাদতের জন্য সেখানেও খেলাফতের দায়িত্ব পালনের কথা বলা হইছে।কারন ইবাদত বলতে যদি নামাজ,রোজা ইত্যাদিকে বোঝানো হয় তা হইলে মানুষ সৃস্টির প্রয়জনই থাকে না।এ'জন্যই ফেরেস্তারা আল্লাহ্র কাছে প্রশ্ন করেছিল হে আল্লাহ্ আপনার প্রশংসা এবং বন্দেগী করার জন্যতো আমরাই আছি আবার নতুন এক সৃস্টির প্রয়জন কি? আনুষ্ঠানিক ইবাদত তথা নামাজ,রোজা,জিকির বা আল্লাহ্র প্রশংসা প্রকাশ এ'সবের জন্য অসংখ্য ফেরেস্তা আছে এবং তার জন্য আসলে মানুষ সৃস্টির প্রয়োজন ছিল না।আর মানুষ এ'সব এবাদত যতটা আন্তরিকতা এবং নৈপুন্যের সাথে করতে পারে তার চাইতে নিখুত ভাবে ফেরেস্তারা অনেক আগে থেকেই করে আসছে।সুতরাং মানুষকে মূলত সৃস্টি করা হইছে আল্লাহ্র খেলাফত বা প্রতিনিধিত্ব করার জন্যে।যে দায়িত্ব আল্লাহ্ অন্য কোন সৃস্টির দ্বারা আদায় করা সম্ভব নয়-এমন কি ফেরেস্তাদের দ্বারাও নয়।এ'জন্যই মানুষের মর্যাদা আল্লাহ্ সকল সৃস্টির চেয়ে বেশি,এ'জন্যই মানুষ সৃস্টির সেরা,এ'জন্যই ফেরেস্তারাসহ আল্লাহ সকল সৃস্টি মানুষকে সেজদা করে তাদের অনুগত্য প্রকাশ করে ছিল।
খেলাফতের মূল বিষয় টা আমাদের কাছে অষ্পস্ট হয়ে যাওয়াতে আমরা ছোট খাট বহু বিষয়ে মতপার্থক্য করেছি এবং বহু দলে বিবক্ত হয়ে পরেছি।আমরা মনে করেছি আনুষ্ঠানিক এবাদত গুলিই আমাদের কাজ। ফলে এইগুলি নিখুদ ভাবে করার জন্য আমাদের প্রচেস্টা বেশি হয়েছে।কিন্তু এটা প্রমানিত হয়ে গেছে যে আনুষ্ঠানিক ইবাদত খুব বেশি নিখুদ ভাবে করতে গেলে মতপার্থক্য হওয়া স্বাভাবিক। একই বিষয়ে বহু হাদিস যেমন আছে তেমনি বহু আলেম বহু ইমাম এর বহু মত থাকবে এটাই স্বাভাবিক।এ'জন্যই রাসূল(স) বলেছিলেন শেষ জামানায় তার উম্মত বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে পরবে কিন্তু তাদের মধ্যে একটি দল থাকে সত্যপন্থি।আজকে মুসলমানদের মধ্যে দলাদলি, বহু বিবক্তি দেখে এটা বোঝা যাচ্ছে আমরা শেষ জামানায় এসে গেছি-কিন্তু আমরা কি সেই সত্যপন্থি দলটি কে খুজে পাচ্ছি? সত্যপন্থি দলটি কে খুজে পেতে ফিরে যেতে হবে আমার আসল পরিচয় খেলাফতের দিকে। খেলাফতের দায়িত্ব অনুধাবনের মাধ্যমেই সত্যপন্থি দলের সন্ধান পাওয়া সম্ভব।
খেলাফতের সবচাইতে প্রচলিত ধারনা হচ্ছে রাষ্ট্রিয় ব্যাবস্থায় ইসলামি রাষ্ট্র চালু করা।এই ব্যাবস্থায় রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যাক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে অথবা জনগনের ভোটের ভিত্তিতে একজন খলিফা নিযক্ত হবেন এবং তিনি কোরআন সন্নাহ,র ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।এই ধরনের রাষ্ট্রীয় খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়ে ছিল রাসূল(স) এর মাদানী জীবনে এবং সেই রাষ্ট্রের খলিফা ছিলেন রাসূল(স) সয়ং।কিন্ত তার ইন্তেকালের মাত্র তিন দশকের মধ্যে হযরত আলী(র) এর শাহাদাতের মাধ্যমে সেই খেলাফতের সমাপ্তি ঘটে।এর পর প্রতিষ্ঠিত হয় রাজতন্ত্র।খেলাফতের অর্থ যদি হয় রাষ্ট্রিয় পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা,তা হইলে বলতে হবে মুসলমানগন বা সামগ্রিক ভাবে মানব জাতি তার খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র তিন দশক।এ'খানে কয়েকটি প্রশ্ন এসে যাচ্ছে-১। তা হইলে আল্লহ্র মানুষ সৃষ্ঠির উদ্দ্যেশ্য ব্যর্থ হয়েছে? ফেরেস্তারা যে আশংকা করে ছিল অর্থাৎ খেলাফতের উদ্দ্যেশ্যে মানুষ সৃষ্টি করা হলে তারা পৃথিবিতে বিপর্জয় সৃষ্টি করবে-সে টাই কি সত্য হল? অথবা শয়তান যে চ্যালেঞ্জ দিয়ে ছিল মানুষ কে বিভ্রান্ত করার সে চ্যালেঞ্জে কি সে জিতে গেছে?আর তার পরেও আল্লহ্ বিশ্ব জগত টিকিয়ে রেখেছেন? ২। বহু বিজ্ঞ আলেম অলী আওলিয়ার জন্ম হয়েছে খেলাফত শেষ হয়ে রাজতন্ত্র শুরু হবার পর। চার মাযহাবের চার ইমাম,ছিয়াছিত্তার ছয় হাদিস সংগ্রাহক কাজ করেছেন রাজতন্ত্রের অধীনে।অথচ তারা কেউ রাজতন্ত্রের বিরুধ্যে যোদ্ধ ঘোষনা অথবা ব্যপক সংগ্রামের উদ্যেগ নেননি।কেন? তারা কি সবাই ভূল করেছেন আর আজকে যারা রাষ্ট্রিয় ব্যাবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠাকেই খেলাফতের একমাত্র পথ হিসাবে বর্ননা করছে এবং যে কোন উপায়ে এমনকি আত্মঘাতি বোমা হামলা করে হলেও তা বাস্তবায়নের চেস্টা করছে তারাই কি ইসলাম ভাল বোঝে? ৩। রাষ্ট্রিয় পর্যায়ে যদি ইসলাম প্রতিষ্ঠা খেলাফতের একমাত্র পথ হয় তা হইলে সে দায়িত্বতো কিছূ সংখ্যক মানুষ পালন করবে। খেলাফত প্রতিষ্ঠাকালীন আন্দোলন বা খেলাফত প্রতিষ্ঠার পর তা পরিচালনা করার জন্য সকল মানুষের প্রয়জন কখনোই হবে না।অথচ আল্লহ্ কিছু সংখ্যক মানুষ নয়,এমন কি শুধুমাত্র মুসলমানগনও নয় বরং পুরো মানব জাতিকে বলেছেন তার প্রতিনিধি বা খলিফা। সেটা কি ভাবে সম্ভব?
এই তিনটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করলে এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে খেলাফত বা আল্লাহ্র প্রতিনিধিত্বের সাথে রাষ্ট্রীয় বিষয় বা রাজনীতির যোগাযোগ অতটা প্রত্যক্ষ নয় যতটা বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দল গুলি প্রচার করে থাকে।হ্যা ইসলামে রাজনীতি অবশ্যই আছে,রাসূল(স) এবং চার খলিফার পদাংক অনুসরন করে রাষ্ট্রিয় ব্যাবস্থায় ইসলামী আইন বাস্তবায়নের চেস্টা অবশ্যই করতে হবে।কিন্তু সেটাই একমাত্র বা মুখ্য পথ নয়।খেলাফত বা আল্লহর প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারটা আরো ব্যাপক এবং তাতে ধর্ম-বর্ন-দেশ-গ
োত্র নির্বিশেষে সবার অংশ গ্রহনের সুযোগ থাকতে হবে-কারন পবিত্র কোরআনে আল্লহ্ পোরো মানব জাতিকেই তার প্রতিনিধির মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার কথা ঘোষনা করেছেন।আর আল্লাহ্ কোনকিছু কোন একটি উদ্যেশ্বে সৃষ্টি করবেন আর সেই সৃষ্টি তার উদ্যেশ্ব পুরন করবে না এটা সম্ভব নয়।সতরাং পৃথিবির প্রতিটি মানুষ আল্লহর প্রতিনিধিত্ব করছে।কেউ জেনে বুঝে আল্লাহর আনুগত্য করছে আর কেউ না জেনে না বুঝে আল্লাহর অবাধ্য হয়ে অন্যের আনুগত্য করছে।
শনিবার, ২ জুলাই, ২০১৬
মানুষের পরিচয় কি
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন