রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬

রাণাপিং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও আমার স্মৃতি

জিয়া উদ্দীন
ষাট দশকের মধ্যভাগ থেকে আমি চৌঘরী গোয়াসপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে জড়িত আছি। পরবর্তীকালে রিয়াজ উদ্দীন প্রধান শিক্ষক হয়ে আসার পরে স্কুলের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তার সাথে আমার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখন তিনি স্কুলের শিক্ষক সমস্যা, আসবাবপত্রের সমস্যা ইত্যাদির ব্যাপারে আমার সাথে আলাপ-আলোচনা করতেন। এক সময় শিক্ষক সমস্যার ব্যাপারে সম্ভবত ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ফারুক আহমদ, হোসেন আহমদ ও সাদিক আহমদ কে স্কুলে অবৈতনিক ভাবে শিক্ষাদানের জন্যভ বললে তারা রাজী হয়ে যান। তখন লন্ডন প্রবাসি আব্দুল খালিক তার মেয়েকে ভর্তি করানোর সুবাদে স্কুলে আসা যাওয়া করতেন বিধায় আমরা একে অন্যের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠি। খালিক সাহেবের মেয়েটি পরবর্তীকালে প্রাথমিক বৃত্তি লাভ করে ছিল। সেই সময় আমরা অর্থাৎ আমি, রিয়াজ উদ্দীন, লন্ডন প্রবাসি আব্দুল খালিখ, ফারুক আহমদ, হোসেন আহমদ ও ছাদিক আহমদ মিলে এলাকায় একটি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করে কিভাবে শিক্ষায় প্রসার ঘটানো যায়, এ নিয়ে আলাপ আলোচনার জন্য এলাকার মুরব্বীয়ানসহ সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে একটি সভা আহবান করি; এবং প্রাইমারী স্কুলের সম্মুখস্থ স্থানটিকে বেঁচে নিয়ে জমির মালিকের সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু স্থানটি পেতে আমরা ব্যর্থ হই। এমনকি হাজী আব্দুল মনাফ ওই জমির পরিবর্তে তার অন্য ভাল জমি দেয়ার প্রস্তাব করলেও তারা রাজী হন নাই। পরবর্তীকালে আমি, আব্দুল খালিক (লন্ডনী), রিয়াজ উদ্দীন, ফারুক আহমদ, হোসেন আহমদ, ছাদিক আহমদ, আব্দুল ওদুদ, ইসমাইল আলী, হাজী আব্দুল মনাফ, শওকত আলী, মাশুক উদ্দীন, আব্দুল হেকিম, আবুল কালাম, মাওলানা সামসুদ্দীন ও মাখন মিয়া প্রমুখ একটি সভায় মিলিত হয়ে চৌঘরী গোয়াস পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমিতে একটি কাঁচাঘর তৈরী করে প্রাইমারী স্কুলের আসবাবপত্র দিয়ে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণী চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। তখন মাশুক উদ্দীন, আবুল কালাম, শওকত আলী ও আব্দুল হেকিমকে নিয়ে এলাকা থেকে বাঁশ সংগ্রহের দায়িত্ব পড়ে আমার উপর। আব্দুল খালিক, আব্দুল ওদুদ ও মাখন মিয়াকে দায়িত্ব দেয়া হয় এ বিষয়ে প্রচার ও যোগাযোগের জন্য এবং শিক্ষকতার দায়িত্ব নেন ফারুক আহমদ, হোসেন আহমদ, ছাদিক আহমদ ও আছমান উদ্দীন। পরে তারা ছাত্রছাত্রী ভর্তি করে ক্লাস আরম্ভ করেন। আমরাও ছাত্রদের সহযোগিতায় বাঁশ সংগ্রহ করে স্কুলে এনে জড়ো করি। পরে আমি নিজে বর্তমান আইডিএ কক্ষের পাশে একখানা একচালা ঘর বানানোর দায়িত্ব নিয়ে নিজের টাকায় গোলাপগঞ্জ থেকে ধাড়া কিনে এনে সহযোগিদের মাধ্যমে স্কুলের প্রথম ঘরটি তৈরী করি। তখন আমাদের সকলের অনুরোধে আব্দুল খালিক লন্ডনী স্কুলে তার একখন্ড জমি দানের আশ্বাস দেন। এতে এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। পরে আলোচনার মাধ্যমে অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে আব্দুল মুকিত সাহেবকে স্কুলে নিয়ে আসার জন্য ফারুক আহমদ ও হোসেন আহমদকে দায়িত্ব দেয়া হয়। জমি পাওয়ার পর সেখানে একটি কাঁচাঘর বানানোর জন্য ও ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনের জন্য হাজী নিসার আলীর সভাপতিত্বে একটি সভায় আমরা ৫ ফেব্রুয়ারী ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনের দিন নির্ধারণ করি। ওই ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন সভায় আলা উদ্দীন, ফারুক আহমদ, শেখ আব্দুল মতিন (পাখী মিয়া) ও শওকত আলী প্রমুখের বক্তৃতা এলাকাবাসীকে আরও সংগঠিত করে।
ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনের পরে সম্ভবত গোলাপগঞ্জে আব্দুল ওদুদের দোকানে আমরা কয়েকজনের সাথে আলাপ প্রসঙ্গে খয়ের উদ্দীন আহমদ (চুনু) রাস্তা বরাবর মাটি ভরাট করে পাকা দিয়ে স্কুল ঘরটি বানানোর প্রস্তাব রেখে এতে সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে তারই নেতৃত্বে স্কুল গৃহটি বানানোর দায়িত্ব দেয়া হয়। এই সময় বিদ্যালয়টিকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য একটি আহবায়ক কমিটি ও একটি ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়। খয়ের উদ্দীন আহমদ (চুনু মিয়া) ও তমজ্জুল আলী (তুতা মিয়ার) তত্ত্বাবধানে দ্রুত স্কুলগৃহের নির্মাণ কাজ এগিয়ে যায়। আমি উল্লিখিত দু-টি কমিটির সদস্য হিসেবে এক মণ বড় রড দানসহ নানা ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করি। নতুন স্থানে পাকা স্কুল গৃহটি নির্মানের পর পাঠশালা থেকে পাঠদান বর্তমান রাণাপিং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। আমি প্রথম থেকে রাণাপিং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে জড়িত এবং প্রতিষ্ঠাতা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছিলাম। তখন সভাপতি ছিলেন হাজী নিসার আলী।
জিয়া উদ্দীন: অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, রাণাপিং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন