বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৬

আ: লীগের কাণ্ডারি যারা

লস্কর বার্তা ডেস্ক : উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহে। এতে সভাপতি হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
আওয়ামী লীগের তৃতীয় সম্মেলন হয় ১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর ঢাকার সদরঘাটে রূপমহল সিনেমা হলে। এ সম্মেলনে দলের নতুন নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। পরে কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহাল থাকেন।
১৯৫৭ সালে কাগমারী আওয়ামী লীগের চতুর্থ সম্মেলনে সোহরাওয়ার্দী-ভাসানীর মতপার্থক্যের কারণে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ ভেঙে যায়। ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। মূল দল আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান অপরিবর্তিত থাকেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড স্থগিত করা হয়। ছয় বছর পর ১৯৬৪ সালে পঞ্চমবারের মতো কমিটি পুনর্গঠিত করে দলটির কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে তর্কবাগীশ-মুজিব অপরিবর্তিত থাকেন।
আওয়ামী লীগের ১৯৬৬ সালের ষষ্ঠ কাউন্সিলে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমদ। এরপর ১৯৬৮ সালে সপ্তম ও ১৯৭০ সালে অষ্টম কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিত থাকেন। ওই কমিটির মাধ্যমেই পরিচালিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রথম ও দলের নবম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সভাপতির পদ ছেড়ে দিলে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় এএইচএম কামারুজ্জামানকে। সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন জিল্লুর রহমান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে আওয়ামী লীগের ওপর মরণাঘাত আসে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি আবার স্থগিত করা হয়। ১৯৭৬ সালে ঘরোয়া রাজনীতি চালু হলে আওয়ামী লীগকেও পুনরুজ্জীবিত করা হয়। দলটির দশম কাউন্সিলে সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে। ১৯৭৭ সালে ওই কমিটি ভেঙে করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। এতে দলের আহ্বায়ক করা হয় সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে।
১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের ১১তম কাউন্সিলে দলের সভাপতি করা হয় আবদুল মালেক উকিলকে এবং সাধারণ সম্পাদক হন আবদুর রাজ্জাক। দলীয় কার্যক্রমে গতি আনার জন্য নির্বাসনে থাকা বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালের ১২তম কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রাখা হয় আবদুর রাজ্জাককে।
১৯৮৩ সালে আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে দলের একটি অংশ বাকশাল গঠন করলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৮৭ সালে ১৩তম কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৯২ সালের ১৪তম ও ১৯৯৭ সালে ১৫তম সম্মেলনে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০০ সালে ১৬তম বিশেষ কাউন্সিলে একই কমিটি বহাল থাকে।
২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ১৭তম জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও আবদুল জলিল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের একক বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হওয়ার পর সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের ১৮তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনা সভাপতি পদে বহাল থাকেন এবং নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন বর্তমান জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
এরপর দল ক্ষমতায় থাকতেই ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ১৯তম জাতীয় কউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পুনরায় নির্বাচিত হন। এই কাউন্সিলের মাধ্যমে তারুণ্যনির্ভর কেন্দ্রীয় কমিটি গড়ে তোলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের ২০ তম জাতীয় সম্মেলন ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় এতে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারন সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের নির্বাচিত হন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন