বুধবার, ২৮ জুন, ২০১৭

মমতাময়ী বাংলা জননী আখ্যান…

হাফিজুল ইসলাম লস্কর :: বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদরের ছোট্র মেয়ে শেখ হাসিনা এখন আর ছোট নেই। বড় হয়েছেন অনেক আগেই, হয়েছেন মা, মা থেকে নানু/দাদু। সভানেত্রীর দায়িত্ব্য পালন করছেন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর, হয়েছেন বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব্য পালন করেছেন তিনবার। বর্তমানে চতুর্থ বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব্য পালন করছেন।

কিন্তু আজ আমরা তা আলোচনা করবোনা। বরং আমরা আলোচনা করবো সাধারন এক মা থেকে বাংলা জননী হয়ে উঠার কথা।

ঘাতকের বুলেট একদিন কেড়ে নিয়েছিল যার মা-বাবা ভাই-ভাবীসহ পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের সকলকে। বিশেষ করে মা বাবাকে কেড়ে নিয়ে এতিম করেছিল। করেছিল অসহায়। আজ সময়ের আবর্তে সেই মা বাবা হারা এতিম অসহায় বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা হয়ে উঠেছেন অসহায়ের বন্ধু, এতিমের মা। নিজের মা-বাবা হারানোর সেই অসহ্য ব্যাথা অনুভব করেছিলেন বলেই তিনি অন্য মা-বাবা হারানো সন্তানদেরকে তিনি মায়ের মতো আগলে রাখেন।

২০১০ সালের নিমতলী ট্র্যাজেডির ঘটনায় তিন অসহায় কন্যার দায়িত্ব্য নেন শেখ হাসিনা। শুধু কি দায়িত্ব? নিজের মেয়ে হিসেবেও স্বীকৃতি দেন তাদের। আগে থেকে ঠিক করা পাত্রদের সঙ্গে তাদের বিয়ে দেন। আগুনের পাঁচদিনের মাথায় ৯ জুন গণভবনে মহা ধুমধামে শেখ হাসিনা তাদের বিয়ে দেন। নিজেই তিন কন্যাকে মায়ের মমতা দিয়ে ভুলিয়ে দেন মা হারানোর বেদনা। ওই ঘটনার সাত বছর পর আজ সেই কন্যারাও মা হয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নানু।

সেই নিমতলী ট্র্যাজেডির ঘটনায় তিন অসহায় কন্যার মায়ের দায়িত্ব্য নিয়ে বিয়ে দিয়েই কর্তব্য শেষ করেননি বরং আজো আপন মায়ের মতো সেই কন্যাদের সন্তাদের প্রতিও দায়িত্ব্য পালন করছেন। যা কেবল মাত্র একজন মহৎ হ্রদয়ের অধিকারী বিশ্ব মাতাই পালন করতে পারেন।

তিন কন্যাদের একজন প্রধানমন্ত্রীর এক কন্যা উম্মে ফারওয়া আক্তার রুনার প্রথম ছেলে সৈয়দ আলী মরজুতা আযান। দেড় মাস আগে আরেক পুত্র সন্তানের মা হয়েছেন রুনা।

রুনা বলেন, ‘আমার বড় ছেলে আযানের নাম রেখেছেন মা শেখ হাসিনা। ২০১১ সালে সন্তান হওয়ার পর আমি আর আমার অন্য দুই বোন- রত্না ও আসমাকে নিয়ে গণভবনে যাই। আসমাও তখন এক সন্তানের জননী। তার ছেলের নাম রমাদান। আযান আর রমাদানের নাম রেখে দেন মা শেখ হাসিনা। সেই নামেই ওরা বড় হচ্ছে।’

পুরান ঢাকায় বসবাসকারী রুনা, রত্না আর আসমা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন কন্যা। আশপাশের বাসিন্দারাও তাদের সেই সম্মানের চোখে দেখেন। তাদের সন্তানদেরও স্নেহ দেন প্রধানমন্ত্রীর নাতি-নাতনি হিসেবেই।

সৈয়দ আলী মরজুতা আযান। বয়স ছয় বছর। রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নার্সারিতে পড়ে। কথায় বেশ পটু। সবকিছু সুন্দর করে বলতে পারে।

তাকে জিজ্ঞেস করা হলো তোমার নানুর খবর কী?

সে বললো নানু ভাল আছে। এবার রোজায় আম-খেজুর পাঠিয়েছে। আমার জন্য নানু জামা দিয়েছেন। গতবারও জামা দিয়েছেন। আমার সাথে ফোনে কথা হয়। এতোক্ষণ আযান যে নানুর কথা বলেছে তিনি আর কেউ নন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এত কিছু শুধুমাত্র একজন সাধারন মা নন বরং অসাধারন মায়েরই পরিচয় বহন করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই ছোট্র, অসহায় ও এতিমদের মায়ের মমতায় পরম স্নেহে বুকে টেনে নেন। নিজ হাতে শিশুকে রান্না করা মুরগির হাড় থেকে মাংস বিচ্ছিন্ন করে মুখে তুলে দেন। শিশুদের মাথায় হাত রেখে খোঁজ-খবর নেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সেসময় নিজ হাতে তাদের মুখে খাবারও তুলে দেন। এমন দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়। দেখে উপস্থিত অন্যরাও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।

নানা নিয়ম-নীতি-শৃঙ্খলা অনুশাসনের দেয়ার ভেদ করে সব কিছুকে ছাপিয়ে প্রধানমন্ত্রিত্বের চেয়ে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠল এক মমতাময়ী মায়ের পরিচয়। বাংলার একজন সাধারণ মা থেকে হয়ে  গেলেন মুহূর্তের মাধ্যে বাংলা জননী। মাতৃস্নেহের এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি বাসভবন গণভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এই সর্বস্বহারা তিন কন্যাকে দান করলেন ওদের বরের কাছে। সে এক আবেগঘন অনির্বচনীয় মুহূর্ত। গণভবনের আলোকিত ঔজ্জ্বল্যের বাহ্যিক দৃশ্যাবলীর সব কিছু যেন ম্লান হয়ে গেল মমতাময়ী এক মায়ের গভীর স্নেহের দীপ্তির কাছে। এমকি সংসদে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তার এই তিন মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন। যা বিশ্ববাসীর হ্রদয় মন্দিরে গাথা থাকবে আজীবন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই মানবিক মমত্ববোধ অন্তর্গত আবেগ আর পারিবারিক ঐতিহ্যেরই পরিচয়।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও ছিলেন অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তার ছেলেবেলার অসংখ্য মানবিক সহমর্মিতার কথা 'বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলা' বইয়ে লিপিবদ্ধ আছে। কিশোর মুজিব প্রচণ্ড গরমের দুপুরে এক বৃদ্ধ লোককে নিজের ছাতাটি দিয়ে শূন্য হাতে ফিরেছিলেন বাড়িতে। শীতে কষ্ট পাওয়া সহপাঠীকে দিয়ে দিয়েছিলেন নিজের গায়ের চাদর। পরবর্তীকালে রাজনৈতিক জীবনে এমন দয়ার্দ্রতার বহু দৃষ্টান্ত তিনি রেখে গেছেন।

বাবার মতো মেয়েও পরম পরোপকারী। কলেজ জীবনে কারও সমস্যাকে নিজের সমস্যা মনে ঝাপিয়ে পরতেন। কারও পরীক্ষার ফরম ফিলআপ কিংবা অন্য কোনো সহায়তায় সবার আগে এগিয়ে এসেছেন শেখ হাসিনা। পরবর্তী জীবনে প্রধানমন্ত্রী হয়েও এই গভীর মমত্ববোধ আর গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার এ দৃষ্টান্ত একের পর এক স্থাপন করেছেন তিনি।

১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ভার গ্রহণের পরও তার কাছে এসে কেউ খালি হাতে ফিরে যাননি। অনেকে চিকিৎসা সাহায্যের জন্য এসেছেন, কেউ এসেছেন ঘর তোলার সাহায্যপ্রার্থী হয়ে, কেউবা অর্থাভাবে সন্তানকে পড়াতে পারছেন না, মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না, যে যখন এসেছে, খালি হাতে কাউকে ফিরিয়ে দেননি তিনি।

গণভবনে যে দুস্থ তিনটি মেয়েকে তিনি নিজ কন্যার স্বীকৃতি দিয়ে বিয়ে দিলেন, তা কোনো আকস্মিক ঘটনামাত্র নয়। এ ঘটনা জননেত্রী শেখ হাসিনার গভীর আবেগসঞ্জাত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেরই অনিবার্য দৃষ্টান্ত।

১৯৬৬-৬৭ সালে মাসিক ললনা পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে শিশুদের প্রতি তার গভীর স্নেহের কারনে তিনি প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। সে জন্যই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চকে তিনি জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করেছেন। এবং দিনটি অতিবাহিত করেন সমাজের সর্বস্তরের শিশুদের নিয়ে।

এসব মানবিক মূল্যবোধ আর গুণাবলিই তাকে তিনটি দুস্থ মেয়ের মা হতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আড়ালে যে একজন মমতাময়ী মায়ের গভীর আবেগময় অধিষ্ঠান, গভীর মমতায় পথের শিশুদের জন্য রচিত বই 'ওরা টোকাই কেন'-এর পাতায় পাতায় জড়িয়ে আছে এক মমতাময়ী নারীর স্নেহার্দ্র হৃদয়ের পরিচয়। বিশ্বময়ী এক মায়ের আখ্যান।

 

.
হাফিজুল ইসলাম লস্কর
শিক্ষক: জামেয়া দারুল উলুম, সিলেট,
নির্বাহী সম্পাদক: সাপ্তাহিক ইউনানী কন্ঠ,
প্রধান সম্পাদক: দৈনিক ফুটন্ত সিলেট।

রবিবার, ২৫ জুন, ২০১৭

"ঈদ হউক সবার জন্য "

.
র্দীঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর, এই দিনট‌ি  মুসলমান তথা আপামর জনগনে‌র  জন্য একটি উৎসবের দিন। কিন্তুু আমাদের সমাজ ব্যাবস্হায় ঈদের দিনেও কিছু মলিন মুখ খোজে পাওয়া যায়,অর্থাৎ অসহায় দরিদ্র মানুষগুলোর মাঝে কষ্টের ছাপ পরিলক্ষ‌িত হয়। কেউবা বাবু সেজে, আবার কেউবা ছিড়া কাপড় পড়ে অর্থাৎ ধনীর জন্য আনন্দের বন্যা আর দারিদ্রের জন্য চিরচেনা সেই কষ্টের ছাপ। ঈদের দিনে ধনীরা নতুন জামা কাপড় পরে বের হয়, আর যখন একজন দরিদ্র লোক  পুরনো জামা পরে বের হয়, তখন বাস্তবিক অর্থে ঈদের কোন আনন্দই থাকে না, কেননা ঈদ উৎসব হচ্ছে সবর্জনীন, এখানে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ যখন সমানভাবে আনন্দ উদযাপন করতে পারবে তখনই ঈদ হবে পরিপূর্ণ আনন্দময়।

আসলে যারা বিত্তশালী তারা যদ‌ি প্রত্যেকে নিজ নিজ আবস্থান হতে একটু সহযোগীতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসে সকলের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার জন্য , তাহলে অন্তত ঈদের দিনে নতুন বস্ত্রহীন মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর হবে। আমরা যখন আধুনিক বিপনী বিতান গুলো থেকে হাজার হাজার টাকার কেনাকাটা করি, তা থেকে একটু টাকা বাঁচিয়ে অন্তত একজন হতদরিদ্র  মানুষকে একটি জামা কিনে দেই তাহল‌ে যে আত্বতৃপ্ত‌ি  পাওয়া যাবে, এই আনন্দ বা আত্বতৃপ্ত‌ি নিজের জন্য হাজার টাকা দিয়ে  ক‌ে‌না নতুন জামার মাজ‌ে খুজ‌ে  পাওয়া যাবে না। তাই আমি মনে করি  নিজের আততৃপ্তির জন্য হলেও সমাজের ভ‌িত্তবানদ‌ের উচিৎ অন্তত ঈদেকে‌ উপলক্ষ করে হতদরিদ্র্য মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা ।

ঈদ মানে হাসি, ঈদ মানে খুশি, আর এই হাসি খুশির দিনটাকে পরিপূর্ণ  আনন্দময় করতে হলে সমাজের অসহায় মানুষগুলোকে আনন্দের অংশিদার করতে হবে। তাদের বাদ দিয়ে পরিপূর্ণভাব‌ে আনন্দ উপভোগ করা যাবে না, তাই  ঈদ কে আনন্দ উৎসবে পরিণত করতে হলে, আমাদের সকলের উচিৎ  হতদরিদ্র মানুষদেরকে  ঈদের আনন্দের অংশিদার করা, তবেই ঈদ হয়ে উঠবে পরিপূর্ণ  আনন্দে ভরপুর।

ঈদ হউক সকলের জন্য আনন্দে ভরপুর।  ঈদ মোবারক, সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।


.
হাফিজুল ইসলাম লস্কর,
শিক্ষক: জামেয়া দারুল উলুম, সিলেট,
নির্বাহী সম্পাদক: সাপ্তাহিক ইউনানী কন্ঠ,
প্রধান সম্পাদক: দৈনিক ফুটন্ত সিলেট।

বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭

শবঈ কদর ও একটি ভুল ধারণা…

হাফিজুল ইসলাম লস্কর :: আমাদের দেশে বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশের ভারত, পাকিস্থান, বাংলাদেশসহ দক্ষিন এশিয়ার ছোট ছোট আরো কিছু দেশে ২৭রামাদ্বানের রাত্রিকেই শবে ক্বদর মনে করে পালন করা হয়।

কিন্তু তাদের এই মনের ধারনা যে কত বড় ভুল তা রাসুল(সা.) হাদিছ দ্বারা বুঝা যায়। সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাইলাতুল কদর কোন রাত তা জানানো হয়েছিল। এবং তিনি তা সাহাবীদেরকে জানানোর জন্য আসতেছিলেন, কিন্তু ঘটনাক্রমে সেখানে দুই ব্যক্তি ঝগড়া করছিল। তাদের ওই ঝগড়ার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে সে রাতের ইলম উঠিয়ে নেওয়া হয়। এ কথাগুলো রাসুল(সা:) সাহাবীদেরকে জানানোর পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- হতে পারে, এতেই তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। এখন তোমরা এ রাত (অর্থাৎ তার বরকত ও ফযীলত) রমযানের শেষ দশকে অন্বেষণ কর। সহীহ বুখারী হাদীস নং ২০২০, সহীহ মুসলিম ১১৬৫/২০৯,

অন্য হাদীসে বিশেষভাবে বেজোড় রাতগুলোতে শবে কদর তালাশ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৫,

তাই একথা নির্দ্বিধায় বলা চলে যে সাতাশ রামাদ্বানের রাতকেই লাইলাতুল কদর মনে করা বা সুনির্দিষ্টভাবে লাইলাতুল কদর নির্ধারন করা মারাত্বক ভুল। কারন রাসুল(সা:) সহিহ হাদিছে সুনিদ্রিষ্ট কোন দিনের কথা উল্লেখ নেই। বরং হাদিছে রামাদ্বানের শেষ দশকে অন্বেষন করার কথা রয়েছে।

আবার অন্য হাদিছে রামাদ্বানের বেজোড় রাতগুলোতে শবে কদর তালাশের আদেশ রয়েছে।

তাছাড়া রমাদ্বানের শেষ দশকের ফযীলতই সবচেয়ে বেশি। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭১, এতেক্বাফ'র অন্যতম উদ্দেশ্য হল শবঈ ক্বদর তালাশ করা। অতএব শুধুমাত্র এটুকু বলা যেতে পারে যে , সাতাশ রামাদ্বান লাইলাতুল কদর হওয়ার অধিক সম্ভবনা রয়েছে।



.
হাফিজ মাওলানা হাফিজুল ইসলাম লস্কর
শিক্ষক: জামেয়া দারুল উলুম সিলেট,

নির্বাহী সম্পাদক: সাপ্তাহিক ইউনানী কন্ঠ,
প্রধান সম্পাদক:হলিবিডি24.কম,
দৈনিক ফুটন্ত সিলেট।

শনিবার, ১৭ জুন, ২০১৭

জেনেনিন ইতিক্বাফ'র উদ্দেশ্য ও বিধি বিধান…

.
আরবি শব্দ ‘আকফ’ মূলধাতু থেকে ইতিক্বাফ শব্দ নির্গত হয়েছে। ইতিক্বাফ’ এর আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে পড়া বা আবদ্ধ হয়ে থাকা।

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশক বা অন্য কোনো দিন জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহকে রাজি খুশি করার নিয়তে পুরুষের জন্য মসজিদে বা নারীদের ঘরে নামাজের নির্দিষ্ট একটি স্থানে ইবাদত করার উদ্দেশ্যে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিক্বাফ বলে।

ইতিক্বাফের নিয়ত : ‘নাওয়াইতু আন সুন্নাতুল ইতিকাফ-মাদুমতু হাজাল মাসজিদ।

ইতিক্বাফের শর্ত : ইতিক্বাফের শর্ত ৩টি। যথা- ১. যে কোনো মসজিদে নিয়মিত জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা হয়, এরূপ কোনো মসজিদে পুরুষদের অবস্থান করতে হবে। মহিলারা আপন ঘরে পর্দার সঙ্গে ইতিকাফ করবে।
২. ইতিকাফের নিয়তে ইতিকাফ করতে হবে। কারণ বিনা নিয়তে ইতিকাফ হয় না।
৩. ইতিকাফকারীকে সর্বদা পাক-পবিত্র থাকতে হবে।

ইতিক্বাফ'র উদ্দেশ্য, মসজিদে বসে আল্লাহর আনুগত্য, সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ লাভের আকাঙ্ক্ষা, সওয়াব অর্জনের প্রত্যাশা এবং লাইলাতুল কদর লাভের আশা করা। প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ দশক রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিতভাবে মসজিদে ইতিকাফ করতেন এবং সাহাবায়ে কিরামও ইতিকাফ করতেন।

রমজানের শেষ ১০ দিন অর্থা ২১তম রাত হতে ২৯তম রাত পর্যন্ত
মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা-ই-কিফায়া। মহল্লার কোনো একজন ব্যক্তি ইতিকাফ পালন করলে সবার পক্ষ হতে আদায় হয়ে যায়। কেউ যদি ইতিকাফ না করেন তবে সবাই সুন্নাত ত্যাগের জন্য দায়ী থাকবে। প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) পবিত্র মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করবে, সে ব্যক্তি দুটি হজ ও দুটি ওমরাহর সমান সওয়াব হাসিল করবে’(বায়হাকি)।
মহানবী (সা.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইবাদতের নিয়তে সওয়াবের আশায় ইতিকাফ করবেন তার যাবতীয় গুনাহ মাফ হয়ে যায়’ (দায়লামী)।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সারাজীবনে একদিন হলেও ইতিকাফ করবেন, কিয়ামতের দিন দোজখ তার কাছ থেকে ১৫শ’ বছর পথ দূরে থাকবে।

মহানবী (সা.) প্রতি বছর রামাদ্বানে ইতিক্বাফ করতেন। এ আমল তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত কায়েম ছিল। এ থেকে সহজেই অনুমান যোগ্য যে নবীজি(সা.) ইতিকাফের কত বেশি গুরুত্ব দিতেন যে,।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রমজানের শেষ দশক (মসজিদে) ইতিকাফ করতেন। এ আমল তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত কায়েম ছিল। নবী করিম (সা.)-এর ওফাতের পর তাঁর বিবিগণও এ নিয়ম পালন করেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

ইতিকাফের বিধিসম্মত সময় মাহে রমজানের ২০ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছু আগে থেকে শুরু হয় এবং ঈদের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই তা শেষ হয়ে যায়। ইতিকাফকারী পুরুষ ২০ রমজান আসরের নামাজের পর সূর্যাস্তের আগে মসজিদে পৌঁছাবেন এবং কোণে একটি ঘরের মতো পর্দা দিয়ে ঘেরাও করে অবস্থান নেবেন; এমনভাবে যেন প্রয়োজনে জামাতের সময় পর্দা খুলে মুসল্লিদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা করা যায়।

এ স্থানে পানাহার ও শয়ন করবেন এবং বিনা প্রয়োজনে এখান থেকে বের হবেন না। তবে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বা ফরজ গোসল প্রভৃতি কাজে অথবা শরিয়তের প্রয়োজনে যেমন জুমার নামাজ প্রভৃতির জন্য বের হওয়া জায়েজ। জাগতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগের জন্য পুরুষদের মসজিদে এবং নারীদের জন্য গৃহে অবস্থ্থান করাই ইতিকাফ।

স্ত্রীলোকের মসজিদে ইতিকাফ করা মাকরুহ। ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে, যেখানে তিনি নামাজ আদায় করেন, সেখানেই ইতিকাফ করবেন। বাড়ির নির্দিষ্ট স্থান না থাকলে যেকোনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে ইতিকাফ করবেন এবং ঈদের চাঁদ উদয় না হওয়া পর্যন্ত ইতিকাফের স্থান ত্যাগ করবেন না।

ইতিক্বাফে করণীয় : ইতিকাফ অবস্থায় করণীয় হচ্ছে- ১. বেশি বেশি আল্লাহর জিকির-আজকার করা, ২. নফল নামাজ আদায় করা, ৩. কোরআন তেলাওয়াত করা, ৪. তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-দরুদ, মোরাকাবা-মোশাহেদা ও তওবা-ইস্তেগফারে ব্যস্ত থাকা, ৫. দ্বীনি ওয়াজ-নসিহত শোনা ও ৬. ধর্মীয় গ্রন্থাবলী পাঠ করা।

ইতিকাফে বর্জনীয় : ইতিকাফ অবস্থায় যেসব কাজ বর্জনীয়- ১. ইতিকাফ অবস্থায় বিনা ওজরে মসজিদের বাইরে যাওয়া, ২. দুনিয়াবি আলোচনায় মগ্ন হওয়া, ৩. কোনো জিনিস বেচাকেনা করা, ৪. ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ করা, ৫. ওজরবশত বাইরে গিয়ে প্রয়োজনাতিরিক্ত বিলম্ব করা ও ৬. স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা। এসব কাজ করলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়।

মহিলাদের ইতিকাফ : পুরুষ যেমনভাবে মসজিদে ইতিকাফ করবে তেমনি মহিলারাও তাদের নিজ নিজ গৃহে ইতিকাফ করবে। নারীদের জন্য ইতিকাফ জায়েজ ও বৈধ। তবে ইসলামের প্রথম যুগে মহিলারা যেমন অবাধে মসজিদে ইতিকাফ করতেন, বর্তমান সময়ে ফেতনার আশঙ্কায় তা জায়েজ নয়। বরং মহিলারা ঘরে নিজ কক্ষে ইতিকাফ করবে।

হযরত ওমর ও হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস। তারা বলেন, রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। নবীজীর (সা.) ইন্তেকালের পর তার স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতেন। (বুখারী)।





.
হাফিজ মাওলানা,
হাফিজুল ইসলাম লস্কর,
শিক্ষক. জামেয়া দারুল উলুম, সিলেট

নির্বাহী সম্পাদক, সাপ্তাহিক ইউনানী কন্ঠ।