বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২১

মুমিনুল হকের ব্যাটের প্রতিটি ছোঁয়ায় ফুটে উঠে বিশুদ্ধ টেস্ট ব্যাটিং


নিজস্ব প্রতিনিধি :: কালো মেঘে ছেয়ে আছে ক্যান্ডির আকাশ। আলোর বড্ড অভাব। আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা আলো মাপার যন্ত্র দিয়ে দেখলেন অবস্থা। তার আগেই অবশ্য মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য হাঁটা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়রা। আলোর স্বল্পতায় খেলা বন্ধ হলেও দিন শেষের ঘোষণা আসেনি। কারণ এখনও প্রায় ঘণ্টাখানেকের মতো বাকি আছে দ্বিতীয় দিনের খেলা।

মাঝে একবার বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ করে খেলোয়াড়রা ড্রেসিং রুমে ফিরে গিয়েছিলেন। যদিও অল্প সময়ের মধ্যেই আবার শুরু হয় খেলা। আর এবার আলোর স্বল্পতায় বন্ধ হয়ে গেছে ম্যাচ। সে পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ৪৭৪। মুশফিকুর রহিম ৪৩ রানে ও লিটন দাস ২৫ রানে অপরাজিত।

টি-টোয়েন্টির যুগে ক্রিকেটে ধাঁচই পাল্টে গেছে। টেস্ট ক্রিকেটেও চলে পালা করে দ্রুত রান তোলার প্র্রতিযোগিতা। সত্যিকারের টেস্ট ব্যাটসম্যানরা যেন হারিয়েই যেতে বসেছেন। কিন্তু ক্যান্ডিতে ৫ ফুট সাড়ে ৩ ইঞ্চি উচ্চতার এক ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং দেখলে টেস্ট-প্রাণ খুঁজে পাওয়া যায়। বিশুদ্ধ টেস্ট ব্যাটিং বলতে যা বোঝায়, সেটিই ফুটে উঠেছে মুমিনুল হকের ব্যাটের প্রতিটি ছোঁয়ায়।

একটু একটু করে যা দিয়ে গড়ে তুলেছেন সেঞ্চুরির প্রাসাদ। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরি করে আউট হয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। শ্রীলঙ্কার মাটিতে যে শতকটি আজীবন স্মৃতির মণিকোঠায় সাজিয়ে রাখবেন মুমিনুল। বিদেশের মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরি বলে কথা! ‍বিশুদ্ধ টেস্ট ব্যাটিংয়ের মায়া মিশিয়ে ১২৭ রানের স্মরণীয় এক ইনিংস খেলেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে লাহিরু থিরিমানের হাতে ধরা পড়ার আগে মোকাবিলা করেছেন ৩০৪ বল। ১১ চারে সাজানো ইনিংসের বল সংখ্যাই বলে দিয়েছে কতটা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন মুমিনুল। ভালো বল যেমন ইস্পাতদৃঢ় প্রতিজ্ঞায় প্রতিহত করেছেন, তেমনি বাজে বলের পুরো ফায়দা তুলে নিজের সঙ্গে দলীয় স্কোর করেছেন সমৃদ্ধ।

মুমিনুলের বিদায়ে বাংলাদেশ হারায় চতুর্থ উইকেট। চা বিরতির আগে তাকে হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ৪৪০ রান।

প্রথম দিনের দ্বিতীয় ওভারে সাইফ হাসানের বিদায়ের পর মাঠে নেমেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সেই হিসাবে বলা যায়, ক্যান্ডি টেস্টের শুরু থেকে ব্যাট করেছেন তিনি। গোটা দিন উইকেট অক্ষত রেখে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর দ্বিতীয় দিনেও সমানতালে লড়ে যাচ্ছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। প্রায় দেড় দিন ব্যাট করে অবশেষে থামলেন শান্ত। ডাবল সেঞ্চুরির আশা জাগালেও বিদায় নিয়েছেন ১৬৩ রানে।

এরই সঙ্গে শেষ হয় শ্রীলঙ্কার উইকেট না পাওয়ার অপেক্ষা। ৮৬ ওভার পর স্বাগিতকরা পায় প্রথম উইকেট। বুধবার তামিম ইকবাল ৩৯তম ওভারে আউট হওয়ার পর আজ (বৃহস্পতিবার) শান্ত ফেরেন ১২৫তম ওভারে। লঙ্কানদের ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন লাহিরু কুমারা। অনেক চেষ্টার পর নিজের বলে নিজেই ক্যাচ তালুবন্দি করে শান্তকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়েছেন এই পেসার।

যাওয়ার আগে শান্ত খেলে গেছেন ১৬৩ রানের ঝলমলে ইনিংস। ক্যারিয়ারসেরা ৩৭৮ বলের লম্বা ইনিংসটি সাজিয়েছেন ১৭ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায়। একই সঙ্গে মুমিনুলকে নিয়ে গড়ে গেছেন তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড জুটি। বাংলাদেশ অধিনায়কের সঙ্গে তিনি গড়েছেন ২৪২ রানের ‍জুটি। ভেঙেছেন এই মুমিনুল ও মুশফিকুর রহিমের আগের ২৩৬ রানের জুটি।

এই বাংলাদেশেকে দেশের মাটিতেও পাওয়া যায়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যাটিং ব্যর্থতায় যে ক্ষত লেগেছিল, সেই ঘা শুকিয়ে অপ্রতিরোধ্য এক বাংলাদেশের ছবি দেখা যাচ্ছে ক্যান্ডিতে। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে প্রথম দিন শাসনের পর দ্বিতীয় দিনেও একই ঢংয়ে সফরকারীরা। প্রথম সেশনে তো উইকেটই হারায়নি। বরং দেশের বাইরে মুমিনুল হক প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর শান্তর দেড়শ ছাড়ানো ইনিংসে বড় সংগ্রহের পথে নিয়ে যায় বাংলাদেশকে।

ক্যান্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিনের লাঞ্চ বিরতির আগে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ১১৮ ওভারে ২ উইকেটে ৩৭৮ রান। প্রথম দিন শেষে স্কোর ছিল একই উইকেটে ৩০২। অর্থাৎ, দ্বিতীয় দিনে কোনও উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশ স্কোরে জমা করেছে ৭৬ রান। আর এই রান তোলার পথে বিদেশের মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মুমিনুল।

টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। হাফসেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে তার চেয়ে ভালো কে জানেন! তারপরও সমালোচনার একটা তীরে মুমিনুল হক বিদ্ধ হতেন নিয়মিত। দেশের মাটিতে সেঞ্চুরি ‘ডালভাত’ বানিয়ে ফেললেও বিদেশের মাটিতে গিয়ে একেবারেই পাওয়া যায় না সেই মুমিনুলকে। অবশেষে দেশের বাইরে এলো তার প্রথম সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যান্ডি টেস্টে আক্ষেপ ঘোচালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

টেস্ট ক্যারিয়ারে নামের পাশে ১০ সেঞ্চুরি। যার একটিও নয় বিদেশের মাটিতে। দেশের মাটিতে প্রতিপক্ষের ওপর ছড়ি ঘোরালেও বাইরে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলতেন মুমিনুল। দেশের মাটিতে সেঞ্চুরি আছে, কিন্তু বিদেশের মাটিতে নেই, এমন ব্যাটসম্যানদের তালিকায় সেঞ্চুরি সংখ্যায় এতদিন সবার ওপরে ছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তবে আজ থেকে ওই তালিকা থেকে কাটা গেলো মুমিনুলের নাম।

টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরি এটি। এর আগেও দশবার উদযাপন করেছেন, তবে এবারের উপলক্ষটা নিঃসন্দেহে আলাদা মুমিনুলের জন্য। বিদেশের মাটিতে তো কখনও এভাবে ব্যাট উঁচিয়ে ধরা হয়নি তার। আগের দিনের ৬৪ রান নিয়ে দিন শুরু করে লাঞ্চের আগেই শতক তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক।

মুমিনুলের সেঞ্চুরির পরপরই দেড়শ পূরণ করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আগের দিনই ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিকে আরেকটি মাইলফলকে নিয়ে গেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। একই সঙ্গে জুটির ডাবল সেঞ্চুরিও হয়ে যায় তাদের।

বাবার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে ছেলে হাফিজুল ইসলাম লস্করের স্মৃতি চারণ


নিজস্ব প্রতিনিধি : বিএমএসএস এর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ও সাপ্তাহিক ইউনানী কন্ঠের সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম লস্করের পিতা আলহাজ্জ মছব্বীর আলী লস্কর (মরহুম) এর  ১ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। (৮রামাদ্বান হিসেবে ১বছর পুর্ণ হলেও ইংরেজী সাল হিসেবে প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী হবে ২মে। কেননা তিনি গত বছরের ২মে ২০২০ মোতাবেক ১৪৪১ হিজরীর ৮রামাদ্বান ইন্তেকাল করেন)। তিনি গত ২০২০ সাল মোতাবেক ১৪৪১ হিজরীর ৮ই রামাদ্বান বিকেল ৩-১০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন।

বাবার স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে হাফিজুল ইসলাম লস্কর জানান, আমার বাবা আমাদের সামনেই চেয়ারে বসা ছিলেন। আর আমরা কথা বলতে ছিলাম, হঠাৎ বাবার হাত পা কাপতে লাগলো আর বাবা তখন মুখ দিয়ে কি যেন পড়তে ছিলেন, মা তখন বাবার মুখে পানি তুলে দিলে বাবা সেই পানি পান করেন, তারপর আমি পানি দিলাম বাবা সেই পানি পান করলেন। এরপর আমরা বাবাকে বিছানায় শুয়ালাম। এর কিছু সময় পরই বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন শান্তির ঘুমে। দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন মহান রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিয়ে।

আমার বাবা বেশ কয়েকদিন থেকেই অসুস্থ ছিলেন। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও ঘুম বেড়ে গিয়েছিল মারাত্মকভাবে। তাছাড়া খাবার খেতে চাইতেন না মোটেও। খাবার খাওয়ানোর জন্য বারবার চেষ্টা করতাম আমরা সবাই। তিনি শুধু বলতেন খাবার জানে চায়'না রে বাবা।

বাবার কথা মনে পড়লে মনে খুবই কষ্ট পাই। এই কষ্ট নিয়ে এখন দিন কাটাচ্ছি। বাবাকে হারানোর আজ এক বছর পূর্ণ হয়েছে।

বাবাহীন একজন ছেলের জীবন যে কতটা বিয়োগান্ত হয়, তা হয়তো যাদের বাবা বেঁচে আছেন তারা কখনোই বুঝতে পারবে না। প্রতিটি মুহূর্তে মনে হয় সত্যি আমি বড়ই একা। একটু ভালোবাসা দেওয়ার, সান্ত্বনা দিয়ে সামনে চলার প্রেরণা জোগানোর মানুষটি আজ বেঁচে নেই। বাবাকে ছাড়া বাঁচতে পারব এ কল্পনা কখনো করিনি। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। কেটে যাচ্ছে একেকটি দিন, একেকটি মাস।

বাবার অনেক স্মৃতি, অনেক কথা, যা আজও ভুলতে পারিনি, ভুলা যায় না। বাবাহীন প্রত্যেক দিন একেকটি ঝামেলা, একেকটি একাকিত্ব। ছায়াহীন পথ, আর লক্ষ্যহীন সকল যুক্তি। বাবাকে খুব মনে করছি। বাবার জন্য অনেক কষ্ট হয়। বাবা না থাকাটা যতটুকু কষ্টের, তার চেয়েও বেশি ঝামেলার।

বাবা, তুমি আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গিয়েছ না ফেরার দেশে। তুমি বেঁচে থাকতে তোমার গুরুত্ব আমরা কখনো বুঝিনি। আজ আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি তোমার অনুপস্থিতি। তোমার চলে যাওয়া আমাদের জীবনে বিশেষ করে আমার জীবনে অপূরণীয় ক্ষতি।

আমার আর এই যান্ত্রিক জীবন ভালো লাগে না বাবা। তোমার ছায়ায় যতটা দিন ছিলাম ভালোই তো ছিলাম। ছোট্ট পুঁচকে একটা ছেলের মতো জীবনটা এগোচ্ছিল। বাবা আমার মতো এই পুঁচকে ছেলেকে এত বড় সংসারে একা ছেড়ে গেলে বাবা? আমি আজকাল বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি বাবা। জীবনের একটা বছর তোমাকে না দেখে কাটিয়ে দিয়েছি আমি।

সত্যি ভাবতে বড় অবাক লাগে। জানিনা কীভাবে সময় এত দ্রুত ক্ষয়ে যায় বাবা। সবকিছু যদি ক্ষণিকের জন্য উল্টো হয়ে যেত, খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেতাম। কী ফিরে পেতাম জানি না, তবে তোমাকে আবারও ফিরে পেতাম ঠিকই বাবা। ফিরে পেতাম সেই সোনাঝরা আনন্দের দিনগুলো। বুকের পাঁজরে আটকে রাখতাম তোমায় বাবা। যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ বাবা।

জানি না জীবন নামের অংক খাতায় আর কত বিয়োগ হবে। তবে তোমাকে হারানোর পরে মনে হয়েছিল দুনিয়াটা বড়ই নিষ্ঠুর একটা জায়গা বাবা। পৃথিবীতে যুগে যুগে একজন মহৎ মানুষের আবির্ভাব ঘটে। আমার চোখে আমার বাবা তাদের একজন। যিনি সারা জীবন কল্যাণ করেছেন মানুষের। অনেক মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। যিনি জীবনে কষ্ট করেছেন কিন্তু কখনো কাউকে কষ্ট দেননি। কখনো বিচ্যুত হননি নীতি ও আদর্শ থেকে। সগৌরবে পাড়ি দিয়েছেন জীবনের ৯০ টি বছর।

সুখী মানুষের কাছে ৯০ বছর হয়তো কিছুই না। কিন্তু আমার বাবা জীবনে ৯০ বছরের প্রতিটি মুহূর্ত সংগ্রামের সঙ্গে পাড়ি দিয়েছেন। গড়ে গেছেন এক বর্ণাঢ্য জীবনের ইতিহাস। আমার লেখনীর মাধ্যমে তার জীবনী বা তাকে সম্পূর্ণভাবে ফুটিয়ে তুলার স্পর্ধা আমার নেই। কোনো কালে হবে কিনা জানি না। বাবার বিবেক আর তার দেখানো পথে হাঁটছি অবিরাম। জানি না এই পথের শেষ আছে কিনা। যদি বা শেষ না হয় এই পথের, ক্ষতি নেই। জীবন তো চলবেই জীবনের মতো। ভয় কী, বাবার আশীর্বাদ আমার সঙ্গেই আছে। বাবা, তোমায় বুকে ধারণ করেই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেব। তুমি যেখানেই থাকো ভীষণ ভালো থেকো বাবা। মহান রাব্বুল আলামিন দান করুন আপনাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম।

আমার বাবার চলাফেরায় কেউ যদি মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন, আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করে দিবেন। আপনাদের সকলের কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ যেন আমার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন। (আমিন)